বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আমরা জান্নাতে ছিলাম পৃথিবীতে আসছি, আবার আমরা জান্নাতে যাব ইনশাআল্লাহ। আমরা সেই জান্নাতে যেতে চাই, যে জান্নাত থেকে এসেছি। আবার জান্নাতে যাওয়ার জন্য আল্লাহ আমাদের দুটি জিনিস দিয়েছেন। নবী দিয়েছেন কিতাব দিয়েছেন। এজন্য দিয়েছেন, এই সুন্দর পৃথিবী দেখে মানুষ যদি বিভ্রান্ত না হয়। যে তার গোল কোথায়, তার গন্তব্য কোথায় এবং কোথায় কোথায় এসেছে কোথায় যেতে হবে। এজন্য নবীও দিয়েছেন কিতাবও দিয়েছেন। স্যাকুলাররা বলে থাকেন ইতিহাসটা একটা কিতাবের মত হয় তাহলে তার প্রথম কয়টা পাতা এবং শেষের কয়টা পাতা হারিয়ে গিয়েছে। শুধু মাঝখানের কয়টা পাতা আছে। আমরা কোথায় ছিলাম কেমন ছিলাম কোথায় যাব তা আমরা জানিনা। এটি হচ্ছে বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বিষয় কিন্তু ইসলামের এটিকে চ্যালেঞ্জ করে। আমরা এসেছি হেদায়েত সহ জান্নাত থেকে আমরা ইনশাআল্লাহ জান্নাতে যাব। আর এই যাওয়ার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের নবী দিয়েছেন। এই নবীদের মধ্যে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীর টাউন হলে তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ময়মনসিংহ মহানগরীর সিরাতুন্নবী (সাঃ) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের প্রিয় রাসুলের আলোচনা যত করি বা যত শুনি ততই শুনতে ইচ্ছা হয়। মনটা যে ভরে না। রাসূল (সাঃ) এর সিরাত নিয়ে যত আলোচনা করা হয়, সিম্পোজিয়াম হয় বা এই ধরনের যত অনুষ্ঠান হয় আমাদের আবেগ আপ্লুত করে। মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে আলোচনা শুনতে গিয়ে। এ কারণেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসূল (সাঃ) কে পাঠিয়েছেন রহমাতাল্লিল আলামিন হিসেবে। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা সমস্ত বিশ্বজগতের প্রভু। রাসূল (সাঃ) সমস্ত বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ। আমরা সেই মহান রসুলের উম্মত। রাসূল যেমন সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল, আমরা হচ্ছি সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত। এটা আমাদের জন্য বিশাল বড় সৌভাগ্যের বিষয়। আমাদের এই সমাজে বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশে এই মাসে বিশেষ করে এ আলোচনাগুলো হয়। আলোচনাগুলোর একটা উদ্দেশ্য রাসূলকে অনুভব করা, রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে সম্মান এবং শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
তিনি আরো বলেন, প্রিয় ভাইয়েরা এবং বন্ধুগণ আল্লাহ সুবাহানাহুওয়া তা’য়ালা, আমাদের জন্য আমাদের জন্যে দুটো নেয়ামত দান করেছেন। একটি হচ্ছে আমাদের অন্ধকারে দেন নাই, আলোর পথ এবং হেদায়েতের পথ দান করেছে। দ্বিতীয় যেটি করেছেন আমাদের জন্য নবী এবং রাসূল পাঠিয়েছেন। দুনিয়ার প্রথম মানুষ হচ্ছে আদম (আঃ), তিনি একই সাথে নবীও ছিলেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবী হিসেবে প্রত্যেক নবীকে কিতাব দিয়েছেন, সহীফা দিয়েছেন।
মহানগর জামায়াতের আমীর মাওলানা কামরুল আহসান এমরুলের সভাপতিত্বে মহানগর সেক্রেটারী অধ্যাপক শহীদুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় উক্ত সিরাতুন্নবী (সাঃ) সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি অ্যাভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ঐতিহাসিকরা বলছেন, রাসূল (সাঃ) যুগ থেকে আজ পর্যন্ত উমাইয়া খেলাফতের শেষ পর্যন্ত মুসলমানরা ইসলামকে ধারণ করে পৃথিবীর একমাত্র দিকে আরেক প্রান্তে পৌঁছে গেছে আলহামদুলিল্লাহ। এটা রাসূল (সাঃ) এর সিরাতের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। আজকের মতো দ্রুতগতির কোন জাহাজ ছিল না। পালতোলা জাহাজ নিয়েই হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে তারা ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিয়েছে। রাসুলের (সাঃ) এর সিরাত কি বুঝার জন্য এই কথাগুলো আমাদের মন মগজে ভাল করে রাখতে। মুসলমানদের সংখ্যাটা খুব বেশি ছিল না। অন্য জাতির হাতে যত বেশি অর্থ সম্পদ ছিল সরঞ্জামাদি ছিল মুসলমানদের তেমন কোন কিছুই ছিল না। তাদের কাছে দুটি বিষয় ছিল কিতাবুল্লাহ আর সুন্নাতে রাসুলুল্লাহ। এই দুটো বিষয়কে ধারণ করে মুসলমানরা সমস্ত পৃথিবীকে হেদায়েতের আলোতে আলোকিত করেছে।
বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, সিরাতের আলোচনায় আরেকটি গভীর বিষয়ে বুঝা উচিত, সেটি হচ্ছে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার রাসূলকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন সে দায়িত্ব পালানোর জন্য মাক্কী যুগে যে সূরা এবং আয়াতগুলো নাযিল হয়েছিল আপনার গভীরভাবে সেগুলো অনুধাবন করবেন। সেখানে তিনটি বিষয় ছিল। রাসুল যখন আসছেন সেই সময় অসংখ্য সমস্যা ছিল। তার মধ্যে জাতীয়তা সমস্যা ছিল। তারা ছিল বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত। ঐক্যবদ্ধতার পদ্ধতি তাদের মধ্যে ছিল না। তাদের অর্থনৈতিক সমস্যা ছিল। সামরিক দিক থেকে তারা বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ছিল। পারস্য এবং রোমান সাম্রাজ্যের মাঝামাঝি ছিল তাদের কোন রাজনৈতিক পরিচিতি ছিল না। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর রাসূলকে যখন পাঠালেন, এত সমস্যার মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে কোন সমাধান দেন নাই। মাক্কী যুগে যে সমস্ত সূরা আয়াতগুলো নাযিল হয়েছে, তিনটি বিষয় ছিল তাওহীদ, আখেরাত এবং রেসালাত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে এই তিনটি বিষয়ের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন।
পরিশেষে তিনি বলেন, আমাদের গভীরভাবে বুঝতে হবে আমরা একটা সংকটের মধ্যে আছি। আমরা একটা স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশে আছি। আমরাই বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ার জন্য স্বপ্ন দেখছি। রাষ্ট্র পরিবর্তনের জন্য, সংস্কারের জন্য আমরা অসংখ্য চেষ্টা করছি। আমাদের সরকারে যারা আছেন, রাজনৈতিক দলে যারা আছেন, বিভিন্ন ফর্মুলা আমরা দিচ্ছি। এই জাতির স্বাধীনতা ৫৩ বছরের বেশি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো স্থিতিশীল অবস্থা আসে নাই। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসে নাই, অর্থনৈতিক মুক্তি আসে নাই। সামাজিক সম্প্রীতি আসে নাই, আমাদের অসংখ্য সমস্যা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রথমেই রাসূলকে তার সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা দেন নাই। অর্থনৈতিক সমস্যা জন্য কোন গাইড লাইন দেন নাই। সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য গাইড লাইন দেন নাই। মাদানী যুগের সেগুলো আসছে। মাক্কী যুগে সূরা গুলো নাযিল হয়েছিল তার তিনিট বৈশিষ্ট্য ছিল, তাওহীদ রিসালাত আখেরাত। তিনটি বিষয়ে যতদিন পর্যন্ত কোন জাতির ধারণা স্পষ্ট না হবে সেই জাতি ততদিন পর্যন্ত কোন অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে টেকসই ভূমিকা রাখতে পারবে না। রাজনৈতিক সমস্যার টেকসই সমাধান সে পাবে না। যেটা আমরা পাচ্ছি না। এ ধরনের সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে আমরা হাজারো সমস্যায় নিজেদের আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলেছি। তিনটি বিষয়ে যদি কোন ব্যক্তির বা কোন জনপদের মানুষের পরিষ্কার না হয় তাহলে আল্লাহর প্রতি আস্থা এবং বিশ্বাস ঈমানের মৌলিক শর্ত যেটি পূরণ সম্ভব হবে না। এই জীবনের সফলতা আসল সফলতা নয় আসল সফলতা আখেরাতে সফলতা। আখেরাতের ব্যর্থতাই আসল ব্যর্থতা। সেখানে যদি ব্যর্থ হইতে হলে আসলে আমি ব্যর্থ। দুনিয়াতে কত বাড়ি গাড়ি হলো টাকা পয়সা হলো সেটা আসার কথা নয়। আল্লাহ সুবাহানাতালা আমাকে আখেরাতে মুক্তি দিলেন কিনা সেই সফলতার দিকে আমার আসল চেষ্টা থাকতে হবে। আল্লাহকে জানা আখেরাতকে বুঝা, দীনকে জানা দীন অনুযায়ী চলা। রসূ্ল (সাঃ) ছাড়া সম্ভব নয়। এই তিনটি বিষয় যতদিন পর্যন্ত স্পষ্ট ধারণা তৈরি না হবে ততদিন পর্যন্ত কোন সমস্যা সমাধানে টেকসই ভূমিকা রাখা যাবে না। প্রিয় ভাই এবং বন্ধুগণ আমরা যারা এই সমাজে বসবাস করছি, আমরা এগুলো আঙ্গিকে সমাজকে গড়ে তুলতে চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
সিরাতুন্নবী (সাঃ) সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য ড. খলিলুর রহমান মাদানী, ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর আসাদুজ্জামান সোহেল, জেলা জামায়াতের আমীর মোঃ আবদুল করিম, সেক্রেটারি মাওলানা মোজাম্মেল হক আকন্দ, মহানগর জামায়াতের সহ-সেক্রেটারি ও মহানগর কর্মপরিষদ সদস্য মাহবুবুল হাসান শামীম, আনোয়ার হাসান সুজন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর কর্মপরিষদ সদস্য আল হেলাল তালুকদার, বায়তুলমাল সম্পাদক ও মহানগর কর্মপরিষদ সদস্য গোলাম মহসীন খান, মহানগর কর্মপরিষদ সদস্য হায়দার করিম, আজিজুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল বারী, খন্দকার আবু হানিফ, সাংগঠনিক থানা শাখার আমীর ও সভাপতিবৃন্দ, ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি শরিফুল ইসলাম সহ অন্যান্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।